হিমুর পুরো নাম হিমাদ্রী মজুমদার। চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ১ নম্বর সড়কের ইংরেজি মাধ্যমের সামারফিল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের ‘এ’ লেভেলের শিক্ষার্থী ছিল সে।
রিয়াদ, সাজু, ড্যানি ও শাওন সহপাঠী হিমুর সঙ্গে রাউজানে মেজবান খাওয়ার
কথা ছিল ২৭ এপ্রিল। দুপুরের মধ্যে মাস্টারমাইন্ডের ন্যাশনাল কারিকুলাম
স্কুলের মোড়ে জড়ো হওয়ার কথা হয় তাদের মধ্যে। যথারীতি হিমু নির্ধারিত
সময়ের আগে ওই মোড়ে এসে হাজির হলে আগে থেকে ওঁৎপেতে থাকা হিমুর সাবেক চার
সহপাঠী তাকে জোর করে ধরে নিয়ে যায়।
জুনায়েদ আহমেদ রিয়াদ, সাজু, ড্যানি ও শাওন নামের চার যুবক হিমুকে
টানাটানি করে রিয়াদের বাসায় (মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ন্যাশনাল কারিকুলাম
ভবনের তৃতীয় তলা) নিয়ে যায়। এই সময় হিমু তার ঘনিষ্ঠ সহপাঠীদের ফোন করতে
চাইলেও ওই যুবকরা হিমুর মোবাইলটি রাস্তায় ফেলে পা দিয়ে চাপ দিতেই ভেঙে
যায়। হিমুকে রিয়াদের বাসায় নিয়ে প্রচণ্ড মারধরের একপর্যায়ে চারতলার
ছাদে নিয়ে যায়।
ছাদে ছিল জার্মানির হিংস্র প্রকৃতির ৫টি ডোবারম্যান জাতের
কুকুর(জার্মানির ডোবারম্যান জাতের কুকুর বিশ্বের হিংস্র কুকুরগুলোর মধ্যে
অন্যতম)। হিমুকে কামড়ানোর জন্য জানোয়ারগুলো লেলিয়ে দেয় রিয়াদ, সাজু,
ডেনি ও শাওন। একপর্যায়ে ছাদের ওপর থেকে তাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়।
হিমুকে প্রথম উদ্ধার করেছিলেন পাশের নির্মাণাধীন ভবনের নিরাপত্তাকর্মী
মোহাম্মদ শাহজাহান।নিরাপত্তাকর্মী শাহজাহান বলেন, ‘ওই দিন বেলা ২টা থেকে
আড়াইটার মধ্যে ওপর থেকে কিছু পড়ার শব্দ শুনতে পাই। কাছে গিয়ে দেখি একটি
ছেলে পড়েছে। পরে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত মেডিক্যালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।’
গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, পরে
সার্জিস্কোপ হাসপাতালে (ইউনিট-২) নেওয়া হয়।হিমুর অবস্থার আরও অবনতি হলে
ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৬ দিন পর বুধবার রাতে সেখানেই
হিমু মারা যায়।
স্থানীয়রা জানান, চতুর্থ তলার ছাদের মুখে কালো রঙের জার্মানির লেজকাটা
ডোবারম্যান জাতের কুকুর রয়েছে। প্রায় ২০-২৫ দিন আগে এক শুক্রবার দুপুরে
ছাদের ওপর থেকে একটি ছেলে পড়ে যায়। সেইসময় সাহেবের ছেলে রিয়াদ থাকলেও
ওইদিন রাতেই তিনি লন্ডনে চলে যান বলে জানা যায়।
হিমুকে হত্যার কথা জানিয়ে মামলার বাদী ও হিমুর মামা প্রকাশ দাশ অসিত
বলেন, “আমার ভাগিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই শাহ আলম টিপুর ছেলের নেতৃত্বে
সহপাঠীরা বাড়ির ছাদে নিয়ে গিয়েছিল। প্রথমে শারীরিক নির্যাতন ও পরে কুকুর
লেলিয়ে দেওয়া হয়। সব শেষে হিমুকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত
করতে চেয়েছিল হিমুর সহপাঠীরা ।”তিনি বলেন, “হিমু হত্যাকাণ্ডের জন্য শাহ
সেলিম টিপুসহ তার ছেলে জুনায়েদ আহমেদ রিয়াদ, সাজু, ডেনি, শাওনকে আসামি
করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।”
‘হিমুর ঘটনায় ৩০২/৩৪ ধারায় হত্যা মামলা নেওয়া হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্ত
করা হয়েছে। এ মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে
ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”বলছেন পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)
মোহাম্মদ আলমগীর হোসাইন ।
No comments:
Post a Comment