Tuesday, January 31, 2012

বিদ্যুতের দাম বাড়ছে বুধবার--পল্লীতে বিদ্যুৎ গ্রাহক ১৮ লাখ বাড়ছে



পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিদ্যুতের পাইকারি (বাল্ক) ও গ্রাহক (খুচরা) পর্যায়ে দাম বাড়ছে বুধবার থেকে।

প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৩ টাকা ২৭ পয়সা থেকে ১৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়ে হচ্ছে ৩ টাকা ৭৪ পয়সা।


আর প্রতি ইউনিট খুচরা বিদ্যুতের দাম বুধবার থেকে হচ্ছে ৫ টাকা ০২ পয়সা। আগের ৪ টাকা ৭১ পয়সা থেকে ৭ দশমিক ০৯ শতাংশ বেড়ে এ দাম হচ্ছে।

গত বছরের ২৪ নভেম্বর পাইকারি দাম এবং ২২ ডিসেম্বর গ্রাহক পর্যায়ে পৃথকভাবে দুই দফায় বাড়ানোর ঘোষণা দেয় জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি। প্রথম দফায় যা ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। দ্বিতীয় দফায় এ দাম বুধবার থেকে কার্যকর হচ্ছে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য সেলিম মাহমুদ মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিদ্যুতের পাইকারি (বাল্ক) ও গ্রাহক পর্যায়ে দাম বুধবার থেকে বাড়ছে।”

এ নিয়ে বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুতের খুচরা ও পাইকারি (বাল্ক) উভয় দাম বাড়ছে চার বার।

সর্বশেষ গত ১ ডিসেম্বর থেকে প্রতি ইউনিট পাইকারি (বাল্ক) বিদ্যুতের দাম ২ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ বাড়িয়ে ৩ টাকা ২৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।

পাশাপাশি প্রতি ইউনিট খুচরা বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ১৬ পয়সা থেকে ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বাড়িয়ে ৪ টাকা ৭১ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।

নতুন পাইকারি দাম

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছ থেকে পাইকারি গ্রাহক ডিপিডিসি, ডেসকো, ওজোপাডিকো ও আরইবি এবং পিডিবির নিজস্ব বিতরণ অঞ্চলগুলো বিইআরসির নির্ধারিত দামে বিদ্যুৎ কেনে।

পাইকারি এসব গ্রাহকরা সারাদেশে গ্রাহক (খুচরা) পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিক্রি করে থাকে।

দাম বাড়ায় ১৩২ কেভি ও ৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইনের জন্য প্রতি কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ আরইবিকে যথাক্রমে ৪ টাকা ২০ পয়সা ও ৩ টাকা ১৭ পয়সায়, ওজোপাডিকোকে ৪ টাকা ২০ পয়সা ও ৩ টাকা ৪৭ পয়সায়, ডেসকোকে ৪ টাকা ২০ পয়সা ও ৪ টাকা ২৪ পয়সায় এবং ডিপিডিসিকে ৪ টাকা ২০ পয়সা ও ৪ টাকা ২৪ পয়সায় কিনতে হবে।

এ ছাড়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব বিতরণ অঞ্চলে ৪ টাকা ২০ পয়সা এবং ৩ টাকা ৯৮ পয়সায় কিনতে হবে।

পিডিবি, ডেসকো, ডিপিডিসি ও ওজোপাডিকোর নতুন দাম

আবাসিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ১০০ ইউনিট পর্যন্ত ২ টাকা ৮৭ পয়সা, ১০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত ৪ টাকা ৪ পয়সা, ৪০০ ইউনিটের ওপরে ৭ টাকা ৪৩ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া সেচে ২ টাকা ১৩ পয়সা, অনাবাসিক বাতির ক্ষেত্রে ৩ টাকা ৬৯ পয়সা এবং রাস্তার বাতি ও পানির পাম্পের জন্য ৫ টাকা ২৮ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আরইবির নতুন দাম

আবাসিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ১০০ ইউনিট পর্যন্ত ২ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৩৪ পয়সা, ১০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ৩ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৯৫ পয়সা, ৩০১ থেকে ৫০০ ইউনিট পর্যন্ত ৫ টাকা ৬৩ পয়সা থেকে ৫ টাকা ৯৮ পয়সা এবং ৫০০ ইউনিটের ওপরে ৭ টাকা ৪২ পয়সা থেকে ৮ টাকা ৮৩ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া সেচে ২ টাকা ৮৭ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৩৬ পয়সা, অনাবাসিক (দাতব্য প্রতিষ্ঠান) ৩ টাকা ৬২ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৭০ পয়সা এবং রাস্তার বাতির জন্য ৫ টাকা ২৮ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।


পল্লী অঞ্চলে আরো ১৮ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে যাচ্ছে সরকার। এর পাশাপাশি রাজধানীর বিদ্যুৎ সমস্যা নিরসনে একটি প্রকল্পও পাস হয়েছে একনেকে।

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের কার্যনির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এই দুটিসহ ৬ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকার আটটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে বলে পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার জানিয়েছেন।

‘পল্লী বিদ্যুতায়ন স¤প্রসারণের মাধ্যমে ১৮ লাখ গ্রাহক সংযোগ প্রদান’ প্রকল্পের আওতায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ৭০টি সমিতির মাধ্যমে নতুন সংযোগ দেবে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা।

দেশে বর্তমানে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বিতরণ লাইন প্রায় ২ লাখ ২১ হাজার কিলোমিটার এবং গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৮৪ লাখ। ৭০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সব গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার মহাপরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

প্রকল্পের কার্যপত্রে বলা হয়েছে, এর আওতায় ৪৫ হাজার কিলোমিটার নতুন বিতরণ লাইন এবং দুই হাজার কিলোমিটার ৩৩ কেভি নতুন লাইন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ৫০০ কিলোমিটার লাইন পুনর্বাসন, ১০০টি ৩৩/১১ কেভি নতুন উপকেন্দ্র নির্মাণ এবং ৫০টি উপকেন্দ্রের ক্ষমতা বাড়ানো হবে।

নতুন ১৮ লাখ সংযোগের জন্য অতিরিক্ত ৭৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। বর্তমানে দেশে দৈনিক বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ৫ হাজার মেগাওয়াট হলেও চাহিদা এর চেয়ে ২ হাজার মেগাওয়াট বেশি। তবে গত তিন বছরে ২ হাজার ৪০৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে।

একনেকে রাজধানীর ঢাকার ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ এবং লোড শেডিং দূর করার লক্ষ্যে ৫৫৩ কোটি টাকার অন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন হয় বলে মন্ত্রী জানান।

এই প্রকল্পের অধীনে ১৩২/৩৩ এবং ৩৩/১১ কেভি নতুন সাব স্টেশন এবং ট্রান্সমিশন ও সাব-ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ করা হবে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।

শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খোন্দকার, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, নৌমন্ত্রী শাজাহান খানসহ একনেক সদস্যরা, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, যে আটটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে, তার ব্যয়ের ৫ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল এবং ৪৮২ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য থেকে মেটানো হবে।

অন্য ছয় প্রকল্প

মঙ্গলবার অনুমোদিত অন্য প্রকল্প হলো- ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, ৭৪ কোটি টাকার উপজেলা প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প, ৭৫ কোটি টাকার দরিদ্র মহিলাদের জন্য সমন্বিত পল্লী কর্মসংস্থান সহায়তা প্রকল্প, ৭৬ কোটি টাকার এস্টাব্লিশমেন্ট অব কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ কমপ্লেক্স (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, ১৫১ কোটি টাকার উপজেলা গর্ভনেন্স প্রজেক্ট এবং ৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নকলা বাইপাস সড়ক নির্মাণ এবং সন্ধ্যাকুড়া-হাতিপাগাড়-ধানুয়া-কামালপুর সড়কের ১০ম কিলোমিটারে চেল্লাখালী নদীর ওপর ১৬৫ মিটার পিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ (সংশোধিত) প্রকল্প।http://bdnews24.com/

No comments: