ছবি: প্রথম আলো
দেশের নানা জায়গায় পানি জমে বন্যা ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের অবস্থায় ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েডসহ পানিবাহিত নানা রোগ হতে পারে। সাধারণত যখন পানি নেমে যায়, তখন রোগবালাই দেখা দেয়।
সময়টা বর্ষাকাল হওয়ায় অতিরিক্ত বৃষ্টি আর সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশনব্যবস্থার অভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইতিমধ্যে পানি জমে বন্যা ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়ে নিম্নাঞ্চলের মানুষজন পানিবন্দী হয়ে পড়ে। আবার দেশের সব স্থানের উচ্চতা এক নয়। এ কারণে এক স্থান জলাবদ্ধ হওয়ার পর ওই পানি আবার নিচু আরেক স্থানের দিকে গড়ায়। এ ধরনের অবস্থায় ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েডসহ পানিবাহিত নানা রোগ হতে পারে। সাধারণত যখন পানি নেমে যায়, তখন রোগবালাই দেখা দেয়। কারণ, যখন পানি থাকে তখন পানিপ্রবাহের কারণে অনেক ধরনের জীবাণুর আক্রমণ ঘটতে পারে না।
তবে পানি নেমে যাওয়ার সময় পুরো এলাকার সব রোগজীবাণু গিয়ে ওই এলাকার জলাশয়গুলোতে পড়ে। দেখা যায়, অনেকেই নদীর আশপাশে খোলা জায়গায় পায়খানা করে। মানুষের এ পয়োবর্জ্য আর ওই এলাকার নানা ময়লা-আবর্জনা মিলে তখন জলাশয়ের পানি দূষিত হয়ে পড়ে। তখন লোকজন যদি ওই সব জলাশয়ের পানি বিশুদ্ধ না করে পান করে বা খাবারের কাজে ব্যবহার, থালা-বাসন ধোয়া, কাপড় কাচা ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করে, তখন ডায়রিয়া বা পানিবাহিত রোগবালাই হতে পারে। আবার দেখা যায় দেশের সব জায়গায় পানিবাহিত রোগ একসঙ্গে ছড়ায় না। কারণ, জলাবদ্ধ থাকার সময় নয় বরং জলাবদ্ধতা কমতে শুরু করলেই ওই এলাকায় এসব রোগের উপদ্রব ঘটে। একই সঙ্গে সব মানুষ একসঙ্গে রোগে আক্রান্ত হয় না। মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটুকু, তার শরীরে কতগুলো জীবাণু প্রবেশ করল এবং সে কী ধরনের পরিবেশে থাকে, রোগ হওয়ার হার—এসবের ওপর নির্ভর করে। মানুষের শরীর যদি এ তিনটির ভারসাম্য করতে না পারে, তখনই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
ডায়রিয়া মূলত পানিবাহিত রোগ। তবে খাবারের মাধ্যমে এর জীবাণু প্রবেশ করে। তবে বন্যা বা বন্যাকালীন মূলত দূষিত পানি পান আর অপরিচ্ছন্নতার কারণেই রোগবালাই বেশি হয়। ডায়রিয়ায় মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা যত সহজ, ডায়রিয়া প্রতিরোধ করাও ততটাই সহজ। তাই সামান্য সচেতন থাকলেই ডায়রিয়া বা এ ধরনের পানিবাহিত মারাত্মক রোগ এড়ানো সম্ভব। আর যারা ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে, তাদেরও দুশ্চিন্তার কিছু নেই। ডায়রিয়া বা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত রোগীদেরও খুব দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব। ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিকার নিয়ে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো।
প্রস্তুত রাখুন নিজেকে
পানির কারণেই এসব রোগ হয় বলে আগে থেকেই বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করে রাখা উচিত। এত দুর্যোগের সময় ও পরবর্তী সময়ে ওই পানি ব্যবহার করা যাবে।
পানি সংগ্রহ করা না গেলে পানি বিশুদ্ধ করার উপকরণগুলো যেমন—বিশুদ্ধকরণ বড়ি, পানি ফোটানোর জন্য জ্বালানি ইতাদির ব্যবস্থা করতে হবে।
এ ছাড়া সাবান, পরিষ্কার পানির পাত্র ইত্যাদিও সংগ্রহ করতে হবে।
রোগাক্রান্ত হলে যাতে দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা হাসপাতালে যাওয়া যায়, সে ব্যবস্থা রাখতে হবে।
পানি বিশুদ্ধ করবেন যেভাবে
যেহেতু দূষিত পানি ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে এসব রোগ হয়, তাই কষ্ট করে হলেও বিশুদ্ধ পানি পান ও ব্যবহার করতে হবে।
টিউবওয়েলের বিশুদ্ধ পানি পাওয়া না গেলে বিভিন্ন জলাশয়ের পানি পান ও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে জলাশয়ের পানি পান ও খাওয়ার কাজে ব্যবহার করতে চাইলে ফুটিয়ে পান করতে হবে।
জলাশয়ের পানি ১০ মিনিট ফুটিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিলে এর বেশির ভাগ জীবাণু মরে যায়। পানি ফোটানোর পর ঠান্ডা করে কিছুক্ষণ রেখে দিলে দৃশ্যমান জীবাণুগুলো নিচের তলানিতে পড়ে যায়। তলানি ফেলে দিয়ে ওপরের পানি ব্যবহার করা যাবে।
তবে প্রতিকূল পরিবেশ ও অন্যান্য কারণে সব জায়গায় পানি ফোটানো সম্ভব হয় না। সেসব জায়গায় পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে
একজন মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে তার শরীর থেকে দ্রুত লবণ ও পানি বেরিয়ে যায়। শরীর থেকে যে পরিমাণ পানি বেরিয়ে যায় তা যদি দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়া না যায় মানুষ তখনই অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং শরীরে লবণ-পানির প্রচুর ঘাটতি দেখা দিলে মারা যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই সময়মতো লবণ-পানি শরীরে ফিরিয়ে দেওয়া গেলে আর মৃত্যুভয় থাকে না।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে খাবার স্যালাইন, ভাতের মাড় বা অন্য কোনো বিশুদ্ধ পানীয় পান করালে শরীরে লবণ-পানির ঘাটতি কমবে। তবে ঘাটতি বেশি হলে সে ক্ষেত্রে কলেরা স্যালাইন দিতে হবে।
রোগীকে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। বাসায় বা হাসপাতালে যেখানেই চিকিৎসা নেন, সে জায়গা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
প্রতিদিন খাবারের আগে ও পায়খানা থেকে ফেরার পর সাবান দিয়ে দুই হাত ভালো করে ধুতে হবে। সাবান না থাকলে ছাই, মাটি বা প্রচুর পরিমাণ পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
এ সময় ডায়রিয়া বা পানিবাহিত রোগবালাই হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে যাতে কোনো প্রাণ হারিয়ে না যায়, সেটাই খেয়াল করার বিষয়।
অনুলিখন: জিয়াউর রহমান চৌধুরী
No comments:
Post a Comment