Thursday, January 26, 2012

দুই বাংলাদেশিকে শিরশ্ছেদ থেকে বাঁচানোর চেষ্টা

 সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৃথক খুনের মামলায় দুই বাংলাদেশির শিরশ্ছেদের দণ্ড মওকুফে নিহতদের পরিবারকে রাজি করানোর চেষ্টা চলছে।
এক্ষেত্রে দণ্ডপ্রাপ্তদের পরিবার সহায়তা পাচ্ছে সংশ্লিষ্ট দুই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের। দণ্ড পাওয়া দুই বাংলাদেশি হলেন- চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ির সাহাব উদ্দিন ও নগরীর আগ্রাবাদের মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ। সাহাব আরব আমিরাতের দুবাইয়ে এক বাংলাদেশিকে এবং রশিদ একই দেশের রাস আল খাইমায় দুই বাংলাদেশিকে হত্যার দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত।
আগামী ৩০ জানুয়ারি তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কথা।
তাদের জন্য ‘ক্ষমাপত্র’ তৈরি নিয়ে বুধবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দণ্ডিত ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বুধবার একটি সভা হয়। এ সভায় জেলা প্রশাসক নিহতদের পরিবারকে ক্ষমায় সম্মত করানোর বিষয়ে স্থানীয় দুই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সহযোগিতা চেয়েছেন।
জেলা প্রশাসক বলেছেন, নিহতদের পরিবার সম্মত হলে দণ্ডিতদের মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন সাজার আবেদন করা হবে। একটি গুদামে ডাকাতি এবং গুদামটির মিশরীয় নিরাপত্তকর্মীকে হত্যার দায়ে গত ৭ অক্টোবর সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে প্রকাশ্যে দিনের বেলা আট বাংলাদেশির শিরশ্ছেদ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এ পদ্ধতি নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

সিদ্ধান্ত ২৭ জানুয়ারির মধ্যে’

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সভায় বলা হয়, ২০১১ সালের ২ মে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাস আল খাইমা প্রদেশে দুই সহোদর মোহাম্মদ আইয়ুব (২৮) ও মোহাম্মদ তৈয়বকে (২৫) হত্যা করেন নগরীর আগ্রাবাদের বাসিন্দা প্রবাসী হারুনুর রশিদ। নিহত দুই সহোদর ফটিকছড়ি উপজেলার সুন্দরপুরের মৃত মোহাম্মদ শফিকের ছেলে। অন্য একটি ঘটনায় ২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ফটিকছড়ির মাইজভাণ্ডার শরীফ গ্রামের মো. ইউনূস ওরফে জামালকে (২৬) হত্যা করেন একই গ্রামের আলী হামজার ছেলে সাহাব উদ্দিন। সভায় নিহত দুই সহোদরের দুই চাচা ফজলুল হক ও নুরুল আলম উপস্থিত ছিলেন। নিহতদের মা রোকেয়া বেগম ও দুই বোন সভায় আসতে অসম্মতি জানান।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহমেদ সভায় বলেন, আইয়ুব-তৈয়বের মা কাউকে বাসায় যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছেন না। এ বিষয়ে তাদের চাচা ও মামাদের সঙ্গে তার কথা হয়েছে বলে জানান প্রশাসক। তিনি বলেন, “তারা জানিয়েছেন আইয়ুব-তৈয়বের মা ও বোন এ বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন।” এ বিষয়ে তিনি সভায় উপস্থিত ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন চৌধুরী, সুন্দরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদুল আজম ও নগরীর উত্তর আগ্রাবাদের ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলামের সহযোগিতা চান। সভায় উপস্থিত নিহত দুই সহোদরের চাচা কোনো বক্তব্য দেননি। সভায় দণ্ডপ্রাপ্ত রশিদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। হত্যাকাণ্ডে দণ্ডপ্রাপ্ত সাহাব উদ্দিনের বাবা, মা ও স্ত্রী সভায় দণ্ড মওকুফের জন্য নিহতদের পরিবার ও সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। নিহতের পরিবারের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত জানাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেন জেলা প্রশাসক।
‘দেশের মর্যাদা রক্ষায় মওকুফের আবেদন’
জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহমদ বলেন, “দেশের মর্যাদা রক্ষায় নিহতদের পরিবারের কাছে আমরা শিরশ্ছেদ মওকুফের আবেদন করছি। তবে হত্যাকারীদের অবশ্যই সাজা হবে।”
নিহতদের পরিবার রাজি হলে আরব আমিরাত দূতাবাসের মাধ্যমে হত্যাকারীদের যাবজ্জীবন সাজার আবেদন করা হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি নিহতদের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিকসহ সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে।
এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহমদ সভায় উপস্থিত নানুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওসমান গণি ও রোসাঙ্গিরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শফির সহযোগিতা চান।
সাহাব উদ্দিনের স্ত্রী রিনা আক্তার বলেন, আমার ছেলের জন্য আমি আমার স্বামীর প্রাণ ভিক্ষা চাই। সরকার ও নিহতের পরিবারের কাছে আমার এ আবেদন। নিহতের ভাই সোহেল বলেন, “আমার মা-বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। দুই বছর পর ভাই হত্যার বিচারের রায় হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারীর দণ্ড মওফুকের বিষয়ে কিছু বলার মতো অবস্থা এখন নেই।” সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণলয়ের উপ-সচিব সুকান্ত দত্ত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. এহছানে এলাহী, ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জনা খান মজলিস প্রমুখ।
by
 http://bdnews24.com/bangla/details.php?cid=2&id=184014&hb=3

No comments: