Friday, February 10, 2012

বিএসএফের গুলিতে দুজন আহত, ছয়জনকে নির্যাতন

সাতক্ষীরার কেড়াগাছি সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে দুই বাংলাদেশি আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার ছয় গরু ব্যবসায়ীকে আটক করে বিএসএফের সদস্যরা নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একজন কৌশলে দেশে পালিয়ে আসতে পেরেছেন।
বিএসএফের গুলিতে আহত দুজন হলেন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কেড়াগাছি গ্রামের ইয়াকুব আলী (২৫) ও কায়বা গ্রামের আবদুল হামিদ (২৫)।

কেড়াগাছি গ্রামবাসীর ভাষ্যমতে, ভারতীয় একদল গরু ব্যবসায়ী গতকাল ভোরে ভারতের উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার তারালি সীমান্ত দিয়ে গরু নিয়ে কেড়াগাছি সীমান্তের দিকে আসছিলেন। গরুগুলো গ্রহণ করতে কেড়াগাছি সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলেন ইয়াকুব, হামিদসহ কয়েকজন বাংলাদেশি। হঠাৎ বিএসএফের সদস্যরা তাঁদের লক্ষ্য করে দু-তিনটি গুলি ছোড়েন। এতে ইয়াকুব ও হামিদ আহত হন। সঙ্গীরা তাঁদের উদ্ধার করে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যান।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সাতক্ষীরা ৩৮ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অপারেশন কর্মকর্তা মেজর হারুন-অর রশিদ বলেন, আহত তরুণেরা গোপনে কোনো বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গুলি চালানোর ঘটনায় ভারতের তারালি ক্যাম্পের বিএসএফ বরাবর প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার কয়া গ্রামের খায়রুল ইসলাম (১৭), সুমন (১৬), লাল্টু (১৫), হাবিবুর রহমান (১৯) ও সাইফুল ইসলাম (১৮) এবং ধানখোলা গ্রামের ইছহাক আলী (৩৫) গত সোমবার দুপুরে গরু আনতে ভারতে যান। বিএসএফের নোনাগঞ্জ ক্যাম্পের সদস্যরা তাঁদের আটক করেন এবং ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন চালান। এঁদের মধ্যে হাবিবুর গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কৌশলে পালিয়ে নিজ গ্রামে ফিরে আসেন এবং অন্য পাঁচজনের পরিবারের সদস্যদের কাছে ঘটনা খুলে বলেন।
বিজিবির চুয়াডাঙ্গার ৩৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান আহমেদ বলেন, ‘পাঁচ বাংলাদেশিকে আটকের খবর পেয়ে বিএসএফের ৪২ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার সঞ্জীব কুমারের সঙ্গে আমি সরাসরি যোগাযোগ করেছি। তিনি জানিয়েছেন, আটকের পর পাঁচ বাংলাদেশিকে কৃষ্ণনগর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। নির্যাতন করা হয়নি। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁদের মুক্ত হতে হবে।’
গরু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিজিবির মতবিনিময়: চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, সীমান্তে বিএসএফের হত্যা-নির্যাতন রোধে ভারতে বাংলাদেশিদের অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধে গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩৯ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে সীমান্তের গরু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে বিজিবি।
সভায় ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সীমান্তে বিএসএফ শিবগঞ্জের আটরশিয়ার হাবিবুর রহমানকে যে নির্যাতন করেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি নির্যাতনের নজির রয়েছে। কিন্তু নির্যাতিত বা নিহতদের পরিবার-এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তা বিজিবিকে জানানো হয় না। অনেকে নিখোঁজ হন, গুম হন সে খবরও পাওয়া যায় না।’
বিজিবির কর্মকর্তা বলেন, গরু আনতে হলে ভারতে প্রবেশ না করে শূন্যরেখা থেকে তা গ্রহণ করে কাস্টমস করিডরের মাধ্যমে সরকারকে কর দিয়ে আনতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও চায় বৈধ প্রক্রিয়ায় গরু আসুক। তিনি বলেন, সম্প্রতি সীমান্তে বিএসএফের হত্যা-নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় বিজিবি আর অবৈধ অনুপ্রবেশে ছাড় দেবে না। এ জন্য গরু ব্যবসায়ীদেরও সহযোগিতা করতে হবে। বৈধ উপায়ে গরু আনতে হবে।
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন ব্যাটালিয়নের অপারেশন কর্মকর্তা মেজর নজরুল ইসলাম, সীমান্ত এলাকার গরু ব্যবসায়ী ও মনাকষা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সামিরুদ্দীন, মজিবুর রহমান, নজরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান প্রমুখ।
by
http://www.prothom-alo.com

No comments: