Thursday, November 24, 2011

All Rounder News-=টিপাইমুখ নিয়ে আমরা সচেতন: প্রধানমন্ত্রী, যৌথ জরিপের দাবিতে দিল্লিতে খালেদার চিঠি






ঢাকা, নভেম্বর ২৩ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বিরোধীদলীয় নেতার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, টিপাইমুখ বাঁধের বিষয়ে দেশের স্বার্থ রক্ষায় সরকার পুরোপুরি সচেতন।

বুধবার জাতীয় সংসদে এ কথা বলেন তিনি। শেখ হাসিনা দাবি করেছেন, সরকারে থাকার সময় বিএনপিই টিপাইমুখ বাঁধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলো।

বরাক নদীর ওপরে টিপাইমুখে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সঙ্গে মনিপুর রাজ্য সরকারের বিনিয়োগ চুক্তির খবর শুক্রবার বিবিসি প্রকাশ করলে তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা উঠে; বাংলাদেশে দেখা দেয় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

টিপাইমুখে বাঁধের বিরূপ প্রভাব পড়ার বিষয়টি তুলে ধরে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া মঙ্গলবার বলেন, সরকার এক্ষেত্রে নতজানু নীতি গ্রহণ করেছে।

টিপাইমুখ প্রকল্পে যৌথ জরিপ চেয়ে নয়া দিল্লিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও বিএনপি বুধবার সকালে জানায়।

এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে এক সুর, বাইরে থাকলে আরেক সুর। চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় তৎকালীন পানিসম্পদমন্ত্রী বলেছিলেন, এ বাঁধ নির্মাণ হলে দেশের স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে না। এখন হরতাল-আন্দোলনের কথা বলছেন বিরোধী নেত্রী। দেশের স্বার্থ ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে চিঠিপত্র দিচ্ছেন বলেও পত্রিকায় দেখছি।”

টিপাইমুখ বাঁধের বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ফজলুল আজিমের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

বিবিসির প্রতিবেদন প্রকাশের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় টিপাইমুখ প্রকল্পের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে নয়া দিল্লিতে চিঠি পাঠায়। মঙ্গলবার তার জবাবে দিল্লি বলেছে, টিপাইমুখে বাঁধ হলেও পানি প্রত্যাহার হবে না। ফলে বাংলাদেশ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। বিশেষ প্রতিনিধিও পাঠাচ্ছি। সার্বিক বিষয়ে সার্ভে করতে হলে বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে করতে হবে। কেউ এককভাবে করবে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে তা হতে দেওয়া হবে না।”

দেশের স্বার্থ ক্ষুন্ন হয় এমন কিছু আওয়ামী লীগ করে না দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, “দেশের স্বার্থ কীভাবে রক্ষা করতে হয়, সে বিষয়ে আমরা যথেষ্ট সচেতন। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব কীভাবে রক্ষা করতে হয়, তা আমাদের জানা। কারণ, দেশটা আমরাই স্বাধীন করেছি।”

মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি বাস্তবায়নে বিরোধী দলের তাগিদ দেওয়ার সমালোচনাও করেন তিনি।

“বিএনপি ইন্দিরা-মুজিব চুক্তিকে সব সময় গোলামীর চুক্তি বলে এসেছে। এখন বলছে, এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি কেন? তারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা বাস্তবায়ন করলেন না কেন? তারাই গোলামী করেছে, আমরা গোলামী করি না,” বলেন হাসিনা।

ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে দেশের স্বার্থ আদায় করছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গঙ্গা পানি চুক্তি করেছি, পানি এসেছে। সীমানা চুক্তি করেছি। ’৭৫ এর পর অনেকে ক্ষমতায় ছিলেন, সীমানা জটিলতা নিরসনে ব্যবস্থা নেয়নি। সাড়ে ছয় কিলোমিটার সীমান্ত অমীমাংসিত ছিল, তার মীমাংসা করেছি। যেখানে যা দরকার, তা করছি।”

তিস্তা চুক্তির অচিরেই করার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “বিএনপি কেন করলো না। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এ নিয়ে আলোচনা চলছে। চুক্তির উদ্যোগ যখন নিয়েছি, তা করেই ছাড়বো।”


Khaleda Jia-টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের আগে যৌথ জরিপের দাবি জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে চিঠি দিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।

বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, গত সোমবারই এই চিঠি নয়া দিল্লিতে পাঠানো হয়।

বিরোধীদলীয় নেতা তার চিঠিতে লিখেছেন, “আমরা মনে করি, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের আগে যৌথ জরিপ হওয়া প্রয়োজন। দুই দেশের মধ্যে আলোচনা করে এ বিষয়ে সমাধানে পৌঁছতে হবে। এখনো সময় আছে, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের আগে যৌথ জরিপ করুন।”

টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে ভারতের জবাব আসার পরদিনই চিঠি পাঠানোর কথা জানালো বিএনপি। এ প্রকল্পের বিরোধিতায় সোচ্চার হতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশের দাঁড়ানোর অঙ্গীকারও মঙ্গলবার করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

বরাক নদীর ওপরে টিপাইমুখে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সঙ্গে মনিপুর রাজ্য সরকারের বিনিয়োগ চুক্তির খবর শুক্রবার বিবিসি প্রকাশ করলে তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা উঠে; বাংলাদেশে দেখা দেয় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

বিষয়টি জানার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর ব্যাখ্যা চেয়ে নয়া দিল্লিতে চিঠি পাঠায়। মঙ্গলবার তার জবাবে দিল্লি বলেছে, টিপাইমুখে বাঁধ হলেও পানি প্রত্যাহার হবে না। ফলে বাংলাদেশ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

এরপর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যৌথ নদীর ওপর কোনো স্থাপনা করার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ভারতের উচিত ছিলো বাংলাদেশকে জানানো।

টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের তোড়জোড়ের শুরু থেকেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছিলো। পরিবেশবাদীরা বলছেন, বরাক নদীর ওপর এ প্রকল্পের বিরূপ প্রভাব পড়বে সিলেট তথা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে।

বরাক নদীই বাংলাদেশে ঢুকে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে দুটি স্রোতধারায় বিভক্ত হয়। এ দুটি আবার এক হয়ে মেঘনা নদী নামে চাঁদপুরে পদ্মার সঙ্গে মিলিত হয়।

খালেদার চিঠিতে বলা হয়, “এই বাঁধ নির্মাণ হলে কেবল ভারত নয়, বাংলাদেশের মেঘনার অববাহিকার তিন কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে।”

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে সরকারের ‘নিরবতার’ সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, “বাঁধ নির্মাণে চুক্তি হয়ে গেছে। তারপরও সরকার কোনো প্রতিবাদ জানায়নি। বিএনপি ইতোমধ্যে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। সিলেট বিএনপি ১ ডিসেম্বর হরতাল আহবান করেছে।”

বাংলাদেশের ওয়াটার মডেলিং-এর প্রতিবেদন তুলে ধরে সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী ফখরুল বলেন, “টিপাইমুখে বাঁধ হলে ওই (সিলেট) অঞ্চলের ২৫ শতাংশ হাওর-বাওড় সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাবে। লবণাক্ততার বিস্তার ঘটবে। এর ফলে মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে।”

টিপাইমুখ প্রকল্প ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় হওয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে বাঁধ ভেঙে সিলেট অঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

ফখরুল জানান, ঢাকায় মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন বাঁধ নিয়ে আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন। তখন যৌথ জরিপের কথা বলা হলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী তা করার আশ্বাসও দিয়েছিলেন।

“কিন্তু এখন ভারত একতরফাভাবে বাঁধ নির্মাণ করছে। এটি একতরফাভাবে করা সমীচীন হবে না বলে বিএনপি চেয়ারপারসন চিঠিতে বলেছেন,” বলেন ফখরুল।

বিএনপির মুখপাত্র জানান, টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে বিএনপির ধারাবাহিক আন্দোলন চলবে। রোড মার্চ কর্মসূচিতে অন্য দাবির সঙ্গে এ বিষয়টিও যোগ হবে।

No comments: