Sunday, January 22, 2012

সেনাবিরোধী লিফলেট উদ্ধার পাঁচ হিযবুত সদস্য গ্রেপ্তার


সেনাবাহিনী সম্পর্কে উসকানিমূলক বক্তব্য-সংবলিত লিফলেট বিতরণের অভিযোগে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহ্‌রীরের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তাঁদের মধ্যে একজন চিকিৎসক এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রও রয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরা এলাকার একটি মসজিদের সামনে থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় দুই পক্ষের হাতাহাতিতে র‌্যাবের এক কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মিনহাজ ইয়ামিন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র মোসাদ্দেক ও মোসাব্বির, মাদ্রাসাছাত্র ইব্রাহিম খলিল ও ফাহিম আফসার। তাঁরা সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহ্‌রীরের সদস্য বলে দাবি করেছে র‌্যাব।
র‌্যাব জানায়, হিযবুত তাহ্‌রীরের অর্ধশতাধিক সদস্য গতকাল জুমার নামাজের পর উত্তরা মডেল টাউনের ৬ নম্বর সেক্টরের ৮ নম্বর রোডে বায়তুন নূর জামে মসজিদের সামনে জমায়েত হন। তাঁরা সেখানে নামাজ পড়ে বের হওয়ার পর মুসল্লিদের মাঝে সেনাবাহিনী সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্য-সংবলিত লিফলেট বিলি শুরু করেন। এ ছাড়া তাঁরা সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন স্লোগানও দেন। খবর পেয়ে বিপুলসংখ্যক র‌্যাব সদস্য মসজিদটি ঘিরে ফেলেন। ওই সময় নামাজ থেকে বের হওয়া মুসল্লিদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। একপর্যায়ে হিযবুত তাহ্‌রীর সদস্যদের সঙ্গে র‌্যাব সদস্যদের ধস্তাধস্তি হয়। গ্রেপ্তার করতে গেলে হিযবুত তাহ্‌রীর সদস্যরা র‌্যাব সদস্যদের কিল-ঘুষি মারতে শুরু করে। এতে এক র‌্যাব কর্মকর্তা আহত হন। পরে ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল দুপুরে হঠাৎ মসজিদটি ঘিরে ফেলেন র‌্যাব সদস্যরা। ওই সময় মুসল্লিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের বাসিন্দারাও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সেখানে উপস্থিত হন র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত র‌্যাব ১-এর পরিচালক লে. কর্নেল রাশিদুল আলম বলেন, 'এখানে কিছু একটা হবে এ রকম গোয়েন্দা তথ্য আমাদের কাছে আগে থেকেই ছিল। এ কারণে আমরা সতর্ক ছিলাম। হিযবুত তাহ্‌রীর সদস্যরা লিফলেট বিলি করছে_খবর পাওয়া মাত্রই আমরা অভিযান চালাই।'
রাশিদুল আলম আরো জানান, গ্রেপ্তার করা হিযবুত তাহ্‌রীর সদস্যদের কাছ থেকে কয়েক হাজার লিফলেট জব্দ করা হয়েছে। সেগুলোতে সেনাবাহিনী সম্পর্কে উসকানিমূলক বিভিন্ন বক্তব্য রয়েছে। এ ছাড়া সাদা-কালো ফুলস্কেপ কাগজে ছাপা ওই লিফলেটে বর্তমান সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে ওই লিফলেট গণমাধ্যমকর্মীদের দেখতে দেওয়া হয়নি। এর কারণ হিসেবে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, বিষয়টির তদন্ত চলছে। তা ছাড়া ওই লিফলেটের বার্তা গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হতে দেওয়াও যুক্তিসংগত হবে না। হিজবুত তাহ্‌রীর সদস্যরা সশস্ত্র ছিল কি না জানতে চাইলে র‌্যাব কর্মকর্তারা বলেন, তদন্তের পরই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সেনা সদরের এক সংবাদ সম্মেলনেও হিযবুত তাহ্‌রীরের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী সম্পর্কে উসকানিমূলক তথ্য-সংবলিত লিফলেট প্রচারের অভিযোগ করা হয়। ওই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সেনাবাহিনীতে কর্মরত ও সাবেক কয়েকজন 'ধর্মান্ধ' কর্মকর্তা সম্প্রতি বাংলাদেশের 'গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত করার' প্রয়াস চালান, যার পরিকল্পনাকারী মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক। মেজর জিয়া সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুক ব্যবহার করে এবং মোবাইল ফোনে অন্য কর্মকর্তাদের 'রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে' সম্পৃক্ত হতে প্ররোচনা দেন। নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হককে অভ্যুত্থান চেষ্টার অভিযোগে খুঁজছে সেনাবাহিনী।
র‌্যাবের লিগ্যাল উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল কালের কণ্ঠকে জানান, হিযবুত তাহ্‌রীর নামে নিষিদ্ধ সংগঠনের জঙ্গি কার্যক্রম থেমে নেই। হিযবুতসহ অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে র‌্যাবের ১৩টি জঙ্গি সেল কাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছৃক এক র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, মেজর জিয়ার বিরুদ্ধে হিযবুত তাহ্‌রীরের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। আইনবহির্ভূত কার্মকাণ্ডে যে-ই জড়িত থাকবে, তাকেই গ্রেপ্তার করা হবে।

No comments: