তিনি পক্ষের। তিনি প্রতিপক্ষেরও। ইনজুরির সঙ্গে তাঁর সখ্যের কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস পড়ে ক্রিকেটাঙ্গনের প্রত্যেকের। তাই তো ৯ মাস বিরতিতে কাল যখন আবার প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরলেন, উল্লাসধ্বনিটা নিজ ক্যাম্প বিমানের চেয়ে মোহামেডান-সমর্থকদের মাঝেও কম জোরে হয়নি।
পারফরম্যান্স বিবেচনায় এমন কিছু করতে পারেননি। মিনিট পঁচিশেক ক্রিজে কাটিয়ে ১৬ বলে ৮ করে হয়েছেন আউট। এরপর বোলিংয়ে ৪ ওভারের স্পেলে ২০ রান দিয়ে উইকেটশূন্য। তবে এসব ছাপিয়ে মাশরাফির প্রত্যাবর্তনটাই বড় খবর। নাছোড়বান্দা ইনজুরিকে যে আরো একবার হারিয়ে দিলেন নাছোড়বান্দা নড়াইল এঙ্প্রেস!
দুই হাঁটুতে সাত-সাতটি অস্ত্রোপচারের ধকল তো কম নয়। তবে এর চেয়েও বেশি মাশরাফির আত্মবিশ্বাসের শক্তি। যতবার তাঁকে বাতিলের খাতায় ফেলা হয়, প্রতিবার ফেরেন আগের চেয়ে প্রবল দর্প নিয়ে। কালও ছিল সেই প্রতিশ্রুতি। ব্যাট হাতে যে ছক্কাটি মারলেন, সেটি শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ইতিহাসের অন্যতম বিশাল ছক্কা। অমিতাভ নয়নকে উড়িয়ে আরেকটু হলেই আছড়ে ফেলেছিলেন স্টেডিয়ামের বাইরে। এরপর বল হাতে ৪ ওভারে ২০ রান দিলেও সেটি আরেকটু বিশ্লেষণের দাবি রাখে। এই ২৪ বলের মধ্যে কোনো ওয়াইড কিংবা নো বল নেই, স্কোরিং শট সাকুল্যে ছয়টি। ফর্মে থাকা ইমরুল কায়েস লেগ স্টাম্পে বল পেয়ে মেরেছেন তিনটি চার এবং একটি ছয়। আর বাকি দুটি সিঙ্গেল। এর বাইরে ১৮টি ডট বল করেছেন মাশরাফি। খারাপ তো নয়!
মাশরাফি সন্তুষ্ট। অনেক দিন পর ম্যাচ খেলার অনুভূতিটা ছিল এমন, 'ভালো লাগছে। আরেকবার ইনজুরিতে না পড়ে সুস্থ আছি, এটাই বড় কথা। এটি ঠিক যে ছন্দ ফিরে পাওয়া আরো সময়ের ব্যাপার। তবে এটুকু বলতে পারি, আগেরবার ইনজুরি থেকে ফেরার পর যেমন ছিলাম, এবার তার চেয়ে অনেক ভালো আছি।' ম্যাচের আগে একটা শঙ্কার মেঘ ঠিকই গুড়গুড় করে ডাকছিল তাঁর মানসাকাশে। সেটি বৃষ্টি হয়ে না ঝরায় আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে মাশরাফির, 'সত্যি বলতে কী, ম্যাচের আগে ভাবছিলাম যদি আবার ব্যথা পাই! এ মুহূর্তে বড় কথা হলো ব্যথা ছাড়াই ম্যাচটি শেষ করতে পেরেছি। ফিজিওর সঙ্গে কথা বলে আশা করছি পরের ম্যাচটিও খেলব।'
যে ২৪টি বল করেছেন, এর মধ্যে ১৮ বলে কোনো রান হয়নি। অফ স্টাম্পের বাইরে দুবার তাঁর বলে পরাস্ত হয়েছেন ব্যাটসম্যান। উইকেটটা পেলে সোনায় সোহাগা হতো, সেটিই কেবল হয়নি। মাশরাফি অবশ্য ম্যাচ শেষে জানাচ্ছেন, উইকেট পাওয়ার চেয়ে বেসিক কাজগুলোর দিকেই বেশি মনোযোগ ছিল তাঁর, 'প্র্যাকটিসে অনেক বড় বড় নো বল হচ্ছিল, এখানে এসে সেটি আর হয়নি। আসলে ম্যাচে এসে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিনি। চেয়েছি কেবল জায়গায় বোলিং করতে। মূল ফোকাস ছিল রানআপ থেকে শুরু করে, ডেলিভারি, ফলো থ্রু_সব কিছু আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।' অ্যাকশন নিয়ে যে খুঁটিনাটি কাজ করছেন, জানালেন তাও, 'অ্যাকশনে কিছু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করছি। তবে সেটি আমূল বদলে দেওয়ার মতো নয়।'
পূর্ণ ছন্দ ফিরে পেয়ে জাতীয় দলে তাঁর শূন্যতা পূরণ কত দূরে? আশার কথাই শোনালেন মাশরাফি, 'আমার টার্গেট এশিয়া কাপ। হাতে তো অনেক সময়। এখন একটু একটু করে এগোতে হবে। ভালো কিছু ম্যাচ আছে। সব ঠিক থাকলে ইনশাআল্লাহ...।'
এই 'সব কিছু ঠিক থাকা'র জন্য এখন কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা। পক্ষ-প্রতিপক্ষ সবার।
No comments:
Post a Comment