Friday, October 5, 2012

দলীয় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ এবং ছাত্র সংসদ কার্যকরের গণদাবী

দলীয় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ এবং ছাত্র সংসদ কার্যকরের গণদাবী

আমরা জানি এবং স্বীকার করছি,ছাত্র রাজনীতির একটা গৌরব ঊজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে । কারণ আমরা দেখেছি-


ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলনে সাধারণ জনগনের পক্ষে ছাত্ররাই এগিয়ে এসেছিল, আমরা দেখেছি-ভাষা আন্দোলনে তাদের ভুমিকা, ১৯৬৯’র গণ অভ্যুত্থান কোনদিন সম্ভব হত না- যদি ছাত্ররা সচেতন ভুমিকা পালনে এগিয়ে না আসতো !! আর,মহান স্বাধীনতা?...ছাত্রদের সেই তিল তিল করে গড়
ে তোলা স্বপ্নেরই প্রতিচ্ছবি নয়?...স্বাধীনতা পরবর্তিকালে নানা কারণেই ছাত্রদের সেই ভূমিকায় ম্লান অধ্যায় নেমে আসতে থাকে! তবু তাদের সেই ম্লান ভুমিকা উজ্জ্বল হয়ে ধরা পড়েছে-স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মধ্যে এবং স্বপ্নের সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা চালুর মধ্য দিয়ে...!!! জাতির দুর্দিনে কোনোদিনই আমাদের পুর্বসুরী ছাত্রদের চুপ থাকতে দেখিনি-তাদের সোচ্চার কণ্ঠ এখনো স্বপ্ন দেখতে শেখায় নতুন প্রজন্মকে...কিন্তু সত্য হলেও স্বীকার করতে দ্বিধা নেই সেটি শুধুই দুঃস্বপ্ন হয়ে ধরা পড়ছে!...

তাদের ভুমিকা নিয়ে প্রতিদিন বিতর্ক চলছে-সমাধান খুঁজার চেষ্টাও কম হইনি,কিন্তু কিছুতেই কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না ! এর প্রধান কারন হিসাবে কলুষিত দলীয় রাজনীতিকে মুখ্য করে দেখাই সমীচিন বলে মনে করছি আমরা । রাজনৈতিক দলের সংখ্যা বাড়লেও পারস্পরিক মত সহিঞ্চুতা কোন দলের মধ্যেই নেই, এমনকি জাতীয় স্বার্থেও তারা পরস্পর বিরোধি অবস্থান ফুটিয়ে তুলতে দ্বিধা করছে না !! এমতাবস্থায়, জাতীয় রাজনীতির কলুষিত ছায়া ক্রমেই গ্রাস করছে উচ্চ শিক্ষার চারনভুমি বলে পরিচিত সকল রাষ্ট্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে। তুচ্ছ ঘটনাতেও প্রতিটা দলের প্রশ্রয়ে পরিচালিত ছাত্রসংগঠনগুলোর মারমুখি অবস্থান-তাদের সেই গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাসে কালিমা লেপণ করছে প্রতিদিন...!! ১৯৯০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ছাত্রসংগঠণের এ ধরনের পারস্পরিক গোলমালের কারনে যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা কোনভাবেই কাম্য ছিল না-কিন্তু তবু কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষেই তা নিয়ন্ত্রণ করার উদ্যেগ নেয়া হয়নি,বরং বিরোধী মতামতের গলা চেপে রুদ্ধ করা হয়েছে...অথচঃ তাদের নোংরা রাজনীতির বলি হয়ে মা হারিয়েছে ছেলেকে,পিতা হারিয়েছে সন্তানকে, বোন হারিয়েছে ভাইকে, আর কেউ হারিয়েছে তার প্রিয় মানুষটিকে!...তাদের নিষ্পাপ বলির রক্ত চুষে চুষে কালচে দাগ পড়ে গেছে পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থায়...!

আর,আমরা যারা সাধারন জনগণ- নির্বাচন এলে ভোট দিয়ে নিজেদের গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালন করি প্রতি ৫ বছর পর পর! তারপর আবার নির্বাচনের অপেক্ষায় থাকি-কারন গণতন্ত্র যে শুধুই নির্বাচন কেন্দ্রিক...! আমরা,এমন নির্বাচনকেন্দ্রিক গণতন্ত্র দেখে আসছি সংসদীয় রাজনীতির শুরু থেকেই এবং তাতেই অভ্যস্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ছি...!...

ছাত্রদের উপর ভর করেই জনগনের এই নিশ্চিন্ত ঘুম!...কারণ ইতিহাসের প্রতি তাদের অগাধ বিশ্বাস যে- ছাত্ররা সময় এলেই গর্জে উঠতে পারে,আর্মি কিংবা পুলিশের বুলেট তাদের নিয়ন্ত্রন করতে পারেনা...!

আজ আবারও ছাত্রদের গর্জে ওঠার সময় এসে গেছে-তবে সেটি বন্দুকের নলের সামনে নয় । এবার গর্জে উঠতে হবে-নিজের অধিকার আদায়ের সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে...। আমরা কিভাবে সেই দায়িত্ব পালন করতে পারি-আসুন সে আলোচনায় প্রবেশ করি-
প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ছাত্র সংসদ রয়েছে, বর্তমানে সেগুলো অকার্যকর । এগুলোতে ছাত্রদের নিয়মিত প্রতিনিধিত্ব থাকলে জাতীয় রাজনীতিতেও কিছু মৌলিক পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা সুষ্ঠভাবে গঠন করা বেশ কঠিন। আর এজন্য আরও বেশী সজাগ হওয়া জরুরী, কারণ আমাদের মূল লক্ষ্য হল রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনা-আর দলীয় পরিচয় থাকলে সেরকম কোন পরিবর্তন পাবার সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ ।এটা এজন্য যে- ক্ষমতাসীন দলের যোগসুত্র থাকলে সেখানে প্রভাব বিস্তারের প্রশ্ন এসেই যায়, এর সাথে যুক্ত হয় বিরোধি মত দমন করার হীনমানসিকতা । যা কার্যতঃ ক্ষতির দিক বাড়িয়ে তুলবে-তাই দলের বলয় থেকে বের হয়ে এসে ছাত্র সংসদ গঠনের কথা ভাবাই সর্বোত্তম । এর জন্য আমাদের যা প্রয়োজন সেদিকে নজর দিতে হবে,যেমন-
ছাত্র সংসদের ভোটার নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সবার প্রতিনিধিত্বও দলাদলি তৈরি করবে এবং সেটি কেউ কামনা করে না। এজন্য বিভাগীয় ফলাফলের ভিত্তিতে ভোটার নির্বাচনের কথা ভাবা যায়- উদাহরন হিসাবে সব বিভাগের সকল ব্যাচ থেকে নেয়া মেধা তালিকার প্রথম দশ জনকে ছাত্র সংসদের সাধারন সদস্য করা যেতে পারে। মুলতঃ এসব সাধারন সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটাভুটিতেই ছাত্র সংসদের নির্বাহী কমিটির সদস্যরা নির্বাচিত হয়ে আসবেন-এবং প্রতি দুই বছর পর পর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একজন সদস্য দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হবার সু্যোগ পাবেন না এবং কোন সদস্যকেই ছাত্রাবস্থায় দলীয় পরিচয় বহন করতে দেয়া হবে না। অনিয়ম করলে কিংবা নিয়ম ভংগ করলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাণ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের বাধ্যবাধকতা রাখা হবে।

হলের জন্য কোন আলাদা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না, নির্বাহী কমিটির নির্বাচিত সদস্যরাই হল প্রশাসনের সাথে প্রয়োজনমাফিক যোগাযোগ রক্ষা করবে,আর বিভাগের সাধারন সদস্যরা হলের বিষয়াদির খুঁটিনাটি সমস্যা সমাধানে তৎপর থাকবে...!!
হলে নির্বাচন না করার আরেকটা কারন- সবার মধ্যে আন্তরিক সহযোগিতার মনোভাব তৈরির সুযোগ রাখা-যা অহেতুক ঝামেলাও এড়াতে সাহায্য করবে !!
আমাদের চাওয়া সীমিত, কিন্তু গুরুত্ব অনেক বেশী । আর পারস্পরিক সচেতনতাই শুধু একে কার্যকর করে তুলতে পারে! কারন দলের পরিচয় ভেংগে কেউই তা করতে এগিয়ে আসবে না-আর আমাদের এটাই করে দেখাতে হবে...!!

আদর্শবাদী ছাত্র সংগঠনগুলো এতে সাময়িক বিভ্রান্তিতে পড়তে পারে-যেহেতু তাদের রাজনীতি জাতীয় স্বার্থেই হয়েছে সবসময়।এ বলিদান তারা হয়তঃ দিতেই রাজি হবে না,আমি তাদেরকে বলছি-এটাও কিন্তু জাতীয় স্বার্থ।আর দলীয় পরিচয় শুধুমাত্র কয়েকজনের মধ্যেই সীমিত হয়ে যায়! ছাত্রের পরিচয়ই হোক-সবচাইতে বড় পরিচয়, যারা জাতীয় ইস্যুতে সবসময় সোচ্চার থাকতে পা্রে-রাজনৈতিক পরিচয় না থাকলে কি ছাত্র রাজনীতি হয় না?

একটা অসুস্থ রাজনীতির বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে- বাম/ডান/মধ্যপন্থি বলে পরিচিত রাজনৈতিক পরিচয় কিছুতেই বড় হয়ে উঠতে পারে না, যদি এমন হয় তা সংকীর্ন মানসিকতাই তুলে ধরে-যা পরিবর্তন করাই আমাদের মুল উদ্দেশ্য।

আমরা কি এই পরিবর্তন প্রত্যাশা করতে পারি?
অবশ্যই পারি-এজন্য প্রথমে কি চাই তা বুঝতে হবে,তারপর সেটি কিভাবে আনা যায় তা ভাবার বিষয় আসে।
আমাদের চাওয়া ছাত্র রাজনীতি থেকে দলীয় ধারা নিষিদ্ধের মাধ্যমে বিদ্যমান ছাত্র সংসদসমুহ কার্যকর করা । এর জন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে দলীয় ছাত্র সংগঠন নিষিদ্ধের আইন প্রনয়ন করা এবং দ্রুত ছাত্র সংসদ কার্যকর করতে পদক্ষেপ নেয়া।

আমাদের গণতন্ত্রের কথা বলেছি-এটি শুধুই নির্বাচনকেন্দ্রিক,তাই আমাদের হাতে সুযোগ অপেক্ষা করছে বলা যায়। কারন-আওয়ামী লীগ কিংবা জাতীয়তাবাদি দলের শাসনকাল আমরা দেখেই আসছি এতদিন,তারা উভয়ে একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ । জনগণের মঙ্গল সাধন তারা করতে চাইলেও কুলিয়ে উঠা সম্ভব হয়না নানা কারনে। আর আমাদের জন্য এদের চাইতে ভাল কোন বিকল্পও নেই-সুতরাং আমাদের এই দাবি তারা পুরন করবে এমন বলা যাবে না...!
তবে,জাতির সবার মঙ্গলকে সামনে রেখে আমরা একটা শক্ত অবস্থান নিতে পারি যে- তাদের দুজনের মধ্যে যিনি প্রথমে পাশে এসে আইন প্রনয়ন এবং ছাত্র সংসদ গুলো পরামর্শ অনুযায়ী কার্যকর করার পদক্ষেপ নেবে, তাকেই আগামী নির্বাচনে বিজয়ী করা হবে...!! কী পারি না এই প্রতিশ্রুতি করতে?...একবার আওয়াজ তুলুন-সবাই যে আপনার দিকে তাকিয়ে!...

written by
Neehon Farid 

No comments: