Friday, June 22, 2012

পদ দ্বিতীয় শ্রেণীর, বেতন প্রথম শ্রেণীর, অভিজ্ঞতা পাঁচতলা মসজিদে ইমামতি



পদ দ্বিতীয় শ্রেণীর, কিন্তু এ পদে আবেদনের জন্য প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে আট বছরের অভিজ্ঞতা চেয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। আবার যে দুজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের প্রথম শ্রেণীর পদে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল না। 
গত এপ্রিল মাসে পেশ ইমাম পদে নিয়োগ পাওয়া এই দুজনের মধ্যে মাওলানা এহসানুল হক ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মো. আফজালের বোনের ছেলে। অন্যজন মাওলানা আনোয়ারুল হক ঢাকার এক সাংসদের ঘনিষ্ঠজন। এহসানুল হক বায়তুল মোকাররমে এবং আনোয়ারুল হককে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদে পদায়ন করা হয়েছে। এ পদ সরকারের রাজস্ব খাতভুক্ত।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন সম্প্রতি দুজন পেশ ইমামসহ ২৩টি শূন্যপদের বিপরীতে ৮০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন এ প্রতিষ্ঠানটি পেশ ইমাম পদের জন্য প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা হিসেবে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে আট বছরের অভিজ্ঞতা চায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে। তাতে উল্লেখ করা হয়, পদটি দ্বিতীয় শ্রেণীর। তবে বেতন স্কেল ধরা হয় ১৮৫০০-২৯৭০০ টাকা। আর প্রার্থীর বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয় অনূর্ধ্ব-৩০ বছর। অন্য ২২টি পদের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে পদমর্যাদা উল্লেখ করা হয়নি।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী ১৮৫০০ টাকা বেতন স্কেলের পদটি প্রথম শ্রেণীর। সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা এ স্কেলে বেতন পান। 
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্র জানায়, পেশ ইমাম পদটি আগে জাতীয় বেতন স্কেলের দশম গ্রেডে ছিল। তখন এটি ছিল দ্বিতীয় শ্রেণীর। ২০০৬ সালের ২৬ জুলাই সরকার পদটি ষষ্ঠ গ্রেডে উন্নীত করে। জাতীয় বেতন স্কেলে ২০টি গ্রেড আছে। এর মধ্যে নবম গ্রেড থেকে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার বেতন স্কেল শুরু।
জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মো. আফজাল দাবি করেন, ‘ইমামের পদটি একটি ব্লক পোস্ট (পদোন্নতি অযোগ্য)। সে জন্য এর বেতন স্কেল বাড়ানো হলেও পদমর্যাদা বাড়ানো হয়নি।’
ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্র জানায়, স্বজনপ্রীতি করার জন্য পদমর্যাদা, বেতন স্কেল ও বয়সের ক্ষেত্রে অনিয়ম করা হয়েছে। এ কারণে এ ধরনের শর্তে উপযুক্ত প্রার্থীরা আবেদন করতে আগ্রহী হবেন না। কেউ প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার পদে আট বছর চাকরি করার পর দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে চাকরির আবেদন করবেন কেন? 
স্বজনপ্রীতির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সামীম মো. আফজাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন আমার আত্মীয়, এটা ঠিক আছে। অন্যজনের কথা জানি না।’
পেশ ইমাম পদে নিয়োগ পাওয়া আনোয়ারুল হক দাবি করেন, সরকারদলীয় কোনো সাংসদের সঙ্গে তাঁর আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। তবে, তিনি মিরপুর ৭ নম্বরের একটি মসজিদে কয়েক বছর ইমামতি করেছেন। সেই মসজিদে সাংসদ কামাল আহমেদ মজুমদার নামাজ পড়তেন। তা ছাড়া, সাংসদের মালিকানাধীন মোহনা টিভিতে তিনি একটি অনুষ্ঠান করেন। সেই সূত্রে তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আছে।
আনোয়ারুল হক ২০০১ সালে চট্টগ্রামের পটিয়া মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস বিভাগ থেকে পাস করে ২০০৬ সালে মিসরে তাফসির বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নেন। ইমামতি করার অভিজ্ঞতা থাকলেও প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা পদে তার চাকরির অভিজ্ঞতা নেই। 
আর মহাপরিচালকের আত্মীয় এহসানুল হক ২০০৫ সালে ঢাকার মালিবাগ জামেয়া শরিয়া মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস এবং ২০০৬ সালে ইফতা পাস করেন। তিনিও কোথাও প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা পদে চাকরি করেননি। আট বছরের চাকরির অভিজ্ঞতাও তাঁর নেই। 
মহাপরিচালক সামীম মো. আফজাল বলেন, ‘ইমামের অভিজ্ঞতা আপনি কীভাবে ধরবেন? দেখা গেছে, কেউ সাবালগ হওয়ার পর থেকেই ইমামতি করছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এমন ইমাম নিয়োগ দিয়েছি, যিনি ঢাকা শহরের পাঁচতলা মসজিদের খতিব ছিলেন। আরেকজন মিসর থেকে পড়াশোনা করেছেন।’ 
পেশ ইমাম নিয়োগের এসব বিষয় নিয়োগের জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নসের সদস্য মাওলানা গোলাম মাওলা নক্সবন্দির নজরে আনলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মৌখিক পরীক্ষায় ‘উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া যায়নি’ বলে কমিটি আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছিল। কিন্তু পরে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘এ নিয়োগ অনেক দিন স্থগিত ছিল, পরে কীভাবে হলো জানি না।’ ২০০৬ সালে জ্যেষ্ঠ পেশ ইমাম ও পেশ ইমাম পদে প্রচলিত নিয়োগবিধির পরিবর্তন করে প্রার্থীর বয়স অনূর্ধ্ব ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৪০ করা হয়। কিন্তু প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্তে অনুমোদিত নিয়োগবিধি অনুসরণ করা হলেও বয়স নির্ধারণ করা হয় অনূর্ধ্ব ৩০ বছর। 
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মাওলানা গোলাম মাওলা নক্সবন্দি বলেন, ‘মৌখিক পরীক্ষার সময় আমাদের মনে হয়েছে, ৩০ বছর বয়সের নিচে ভালো ইমাম পাওয়া যায় না। কমিটির প্রতিবেদনে এটি আমি উল্লেখও করেছি।’

No comments: