: হায় মুলতান! বাংলাদেশ ক্রিকেটের চিরন্তন এক দুঃখগাথা। সেখানে টেস্ট আঙিনায় নিজেদের সেই শৈশবে পাকিস্তানকে তো প্রায় হারিয়েই দিয়েছিল বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত যে পারেনি, তাতে আপাতদৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ইনজামাম-উল হকের অতিমানবীয় ব্যাটিং কীর্তির। পাশাপাশি আম্পায়ারদের বেশ কয়েকটি প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত এবং চতুর্থ দিনের উইকেটের বি স্ময়কর রকম ভালো আচরণের রহস্যময়তার দায়ও কম নয়। এ কারণেই তো মুলতানের ওই এক উইকেটের হারের আলোচনায় আজো বাংলাদেশের ক্রিকেটসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হৃদয়ের গহিন থেকে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস।
২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১১-র ডিসেম্বর। টিক টিক করে মহাকাল এগিয়ে গেছে আট বছর তিন মাস। কিন্তু এই সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট এগোল কতটা? পাকিস্তানের মুখোমুখি সর্বশেষ টেস্টে মুলতানে যারা হেরেছিল মাত্র এক উইকেটে, তারাই কিনা এবার ঘরের মাঠ চট্টগ্রামে হারল ইনিংস ও ১৮৪ রানে। হ্যাঁ, ক্রিকেটটা অঙ্ক নয় এবং এই দুটো ফল মিলিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের মানদণ্ড ঠিক করাও বোকামি। এর পরও আট বছর আগে-পরের হিসাব মেলাতে বসলে এ দেশের ক্রিকেটের অন্ধকারাচ্ছন্ন দিকটাতেই আলো পড়বে বেশি করে। বিশেষত চলতি সিরিজের সবগুলো ম্যাচে যেভাবে তারা অসহায় আত্মসমর্পণ করছে...!
টোয়েন্টি-টোয়েন্টি, তিন ওয়ানডের পর প্রথম টেস্ট_এই পাঁচ ম্যাচের প্রতিটিতে বলতে গেলে দাঁড়াতেই পারেনি স্বাগতিকরা। একটুখানি ব্যতিক্রম চট্টগ্রামের তৃতীয় ওয়ানডে। পাকিস্তানকে ১৭৭ রানে গুটিয়ে দিয়ে একসময় জয়ের স্বপ্ন আঁকিবুঁকি কাটছিল মুশফিকুর রহিমের মনে। কিন্তু তাঁর ব্যাটসম্যানরা যে সুযোগটা হেলায় হারালেন! এখন সম্মান বাঁচানোর শেষ সুযোগ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় টেস্ট। সেখানে জয়ের কথা উচ্চারণ তো দূরে থাক, মনে মনে ভাবতেও বুক কাঁপবে বাংলাদেশ দলের। যদি একটু লড়াই করা যায়, তাই ঢের!
সেই লড়াইয়ের আশায় পরশু থেকে মাঠে গড়ানো এই টেস্টের একাদশে অবধারিতভাবে আসছে পরিবর্তন। এবং বলীর পাঁঠা সেই মোহাম্মদ আশরাফুল! জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারে টেস্টে সর্বোচ্চ রান করার পরও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে তাঁকে বাদ দিয়েছিলেন নির্বাচকরা। কারণ ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে রান পাচ্ছিলেন না। নির্বাচকরা তখন আনঅফিশিয়ালি জানিয়ে দিয়েছিলেন অন্তত বছরখানেকের মধ্যে আশরাফুলকে আর ডাকবেন না তাঁরা। ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার পরই কেবল পুনরায় খুলবে জাতীয় দলের দরজা। নির্বাচকরা তাঁদের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারেননি। পারবেন কী করে, পাকিস্তানের বিপক্ষে দলের টপ অর্ডার যে ম্যাচের পর ম্যাচ ভেঙে পড়ছিল তাসের ঘরের মতো! অবশেষে তাই আবার ওই আশরাফুলের দ্বারস্থ!
কিন্তু হঠাৎ পাওয়া এ সুযোগের অপচয় কী নিদারুণভাবেই না করলেন আশরাফুল! জাতীয় লিগের সর্বশেষ তিন ম্যাচে একটি সেঞ্চুরি এবং দুটি হাফ সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান টেস্টের পরীক্ষায় নেমে খাবি খেলেন রীতিমতো। প্রথম ইনিংসে ১ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে শূন্য করে প্রত্যাশায় প্রত্যাঘাত করলেন চরমভাবে। ফল? আবারও আশরাফুলকে ছুড়ে ফেলা। 'আসলে ও আমাদের প্রত্যাশা মেটাতে পারেনি। দ্বিতীয় টেস্টের একাদশে নিশ্চিতভাবেই থাকছে না আশরাফুল। তাই যদি হয়, তাহলে আর ওকে ধরে রেখে লাভ কী! এর চেয়ে জাতীয় লিগে বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচ খেললে সেটি ওর জন্যই ভালো'_আশরাফুলকে বাদ দেওয়ার কারণটা এভাবেই জানিয়েছেন এক নির্বাচক। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে নারাজ তিনি। কারণ নির্বাচকরা দ্বিতীয় টেস্টের স্কোয়াড বোর্ড প্রেসিডেন্টের কাছে জমা দিয়েছেন সন্ধ্যায়। এর ঘণ্টাতিনেক পরও তা অনুমোদন হয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি হতে পারেনি। ফলে আজ থেকে বাংলাদেশ স্কোয়াডে কারা প্র্যাকটিস করবেন, সে নিয়েও আছে ধোঁয়াশা। এর আগেই যে আশরাফুল দলের সঙ্গে হোটেলেই উঠেছেন!
নির্বাচকদের দেওয়া স্কোয়াড অনুযায়ী দ্বিতীয় টেস্টে আশরাফুলের জায়গায় ঢুকেছেন নাঈম ইসলাম। প্রথম টেস্টের স্কোয়াডেও তিনি ছিলেন। কিন্তু জ্বরের কারণে ফিরে আসেন চট্টগ্রাম থেকে। এখন সুস্থ হয়ে খেলার মতো ফিটনেস ফিরে পেয়েছেন নাঈম। আশরাফুল যেহেতু খেলছেন না, একাদশে এই অলরাউন্ডারের থাকাটাও একরকম নিশ্চিত। দ্বিতীয় টেস্ট স্কোয়াডে বাধ্য হয়েই করতে হয়েছে আরেকটি পরিবর্তন। ইনজুরির কারণে ছিটকে গেছেন রুবেল হোসেন। তাঁর জায়গায় এসেছেন শফিউল ইসলাম। গোড়ালির ইনজুরির কারণে লম্বা দৈর্ঘ্যের ক্রিকেট খেলায় ঝুঁকি আছে বগুড়ার এই পেসারের। সেটি হলেও দলের দুর্দিনে 'এসওএস' গেছে শফিউলের কাছেই। বারবার সুযোগ পেয়েও সেটি কাজে লাগাতে না পারায় হুমকির মুখে ছিল শাহরিয়ার নাফীসের জায়গাও। কিন্তু বিকল্প হিসেবে আছেন যিনি, সেই ইমরুল কায়েসেরও তো চলছে ফর্মের সঙ্গে আড়ি। তার ওপর ভুগছেন ইনজুরিতেও। সব মিলিয়ে আরেকটি সুযোগ হয়তো পেতে পারেন শাহরিয়ার।
আশরাফুল হয়তো আর তা পেলেন না। ২০০৩ সালে মুলতানের ওই অবিস্মরণীয় ম্যাচে বাংলাদেশ দলের অংশ ছিলেন তিনি। এরপর যেমন নানা উত্থান-পতনে এগিয়েছে তাঁর ক্যারিয়ার। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অর্জন-বিসর্জনের গতিপথটিও তেমন। আর এখন দুই পক্ষই হারিয়ে খুঁজে ফিরছে নিজেদের।
বাংলাদেশ ক্রিকেট এবং আশরাফুল এখানে এক বিন্দুতে!
২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১১-র ডিসেম্বর। টিক টিক করে মহাকাল এগিয়ে গেছে আট বছর তিন মাস। কিন্তু এই সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট এগোল কতটা? পাকিস্তানের মুখোমুখি সর্বশেষ টেস্টে মুলতানে যারা হেরেছিল মাত্র এক উইকেটে, তারাই কিনা এবার ঘরের মাঠ চট্টগ্রামে হারল ইনিংস ও ১৮৪ রানে। হ্যাঁ, ক্রিকেটটা অঙ্ক নয় এবং এই দুটো ফল মিলিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের মানদণ্ড ঠিক করাও বোকামি। এর পরও আট বছর আগে-পরের হিসাব মেলাতে বসলে এ দেশের ক্রিকেটের অন্ধকারাচ্ছন্ন দিকটাতেই আলো পড়বে বেশি করে। বিশেষত চলতি সিরিজের সবগুলো ম্যাচে যেভাবে তারা অসহায় আত্মসমর্পণ করছে...!
টোয়েন্টি-টোয়েন্টি, তিন ওয়ানডের পর প্রথম টেস্ট_এই পাঁচ ম্যাচের প্রতিটিতে বলতে গেলে দাঁড়াতেই পারেনি স্বাগতিকরা। একটুখানি ব্যতিক্রম চট্টগ্রামের তৃতীয় ওয়ানডে। পাকিস্তানকে ১৭৭ রানে গুটিয়ে দিয়ে একসময় জয়ের স্বপ্ন আঁকিবুঁকি কাটছিল মুশফিকুর রহিমের মনে। কিন্তু তাঁর ব্যাটসম্যানরা যে সুযোগটা হেলায় হারালেন! এখন সম্মান বাঁচানোর শেষ সুযোগ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় টেস্ট। সেখানে জয়ের কথা উচ্চারণ তো দূরে থাক, মনে মনে ভাবতেও বুক কাঁপবে বাংলাদেশ দলের। যদি একটু লড়াই করা যায়, তাই ঢের!
সেই লড়াইয়ের আশায় পরশু থেকে মাঠে গড়ানো এই টেস্টের একাদশে অবধারিতভাবে আসছে পরিবর্তন। এবং বলীর পাঁঠা সেই মোহাম্মদ আশরাফুল! জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারে টেস্টে সর্বোচ্চ রান করার পরও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে তাঁকে বাদ দিয়েছিলেন নির্বাচকরা। কারণ ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে রান পাচ্ছিলেন না। নির্বাচকরা তখন আনঅফিশিয়ালি জানিয়ে দিয়েছিলেন অন্তত বছরখানেকের মধ্যে আশরাফুলকে আর ডাকবেন না তাঁরা। ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার পরই কেবল পুনরায় খুলবে জাতীয় দলের দরজা। নির্বাচকরা তাঁদের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারেননি। পারবেন কী করে, পাকিস্তানের বিপক্ষে দলের টপ অর্ডার যে ম্যাচের পর ম্যাচ ভেঙে পড়ছিল তাসের ঘরের মতো! অবশেষে তাই আবার ওই আশরাফুলের দ্বারস্থ!
কিন্তু হঠাৎ পাওয়া এ সুযোগের অপচয় কী নিদারুণভাবেই না করলেন আশরাফুল! জাতীয় লিগের সর্বশেষ তিন ম্যাচে একটি সেঞ্চুরি এবং দুটি হাফ সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান টেস্টের পরীক্ষায় নেমে খাবি খেলেন রীতিমতো। প্রথম ইনিংসে ১ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে শূন্য করে প্রত্যাশায় প্রত্যাঘাত করলেন চরমভাবে। ফল? আবারও আশরাফুলকে ছুড়ে ফেলা। 'আসলে ও আমাদের প্রত্যাশা মেটাতে পারেনি। দ্বিতীয় টেস্টের একাদশে নিশ্চিতভাবেই থাকছে না আশরাফুল। তাই যদি হয়, তাহলে আর ওকে ধরে রেখে লাভ কী! এর চেয়ে জাতীয় লিগে বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচ খেললে সেটি ওর জন্যই ভালো'_আশরাফুলকে বাদ দেওয়ার কারণটা এভাবেই জানিয়েছেন এক নির্বাচক। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে নারাজ তিনি। কারণ নির্বাচকরা দ্বিতীয় টেস্টের স্কোয়াড বোর্ড প্রেসিডেন্টের কাছে জমা দিয়েছেন সন্ধ্যায়। এর ঘণ্টাতিনেক পরও তা অনুমোদন হয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি হতে পারেনি। ফলে আজ থেকে বাংলাদেশ স্কোয়াডে কারা প্র্যাকটিস করবেন, সে নিয়েও আছে ধোঁয়াশা। এর আগেই যে আশরাফুল দলের সঙ্গে হোটেলেই উঠেছেন!
নির্বাচকদের দেওয়া স্কোয়াড অনুযায়ী দ্বিতীয় টেস্টে আশরাফুলের জায়গায় ঢুকেছেন নাঈম ইসলাম। প্রথম টেস্টের স্কোয়াডেও তিনি ছিলেন। কিন্তু জ্বরের কারণে ফিরে আসেন চট্টগ্রাম থেকে। এখন সুস্থ হয়ে খেলার মতো ফিটনেস ফিরে পেয়েছেন নাঈম। আশরাফুল যেহেতু খেলছেন না, একাদশে এই অলরাউন্ডারের থাকাটাও একরকম নিশ্চিত। দ্বিতীয় টেস্ট স্কোয়াডে বাধ্য হয়েই করতে হয়েছে আরেকটি পরিবর্তন। ইনজুরির কারণে ছিটকে গেছেন রুবেল হোসেন। তাঁর জায়গায় এসেছেন শফিউল ইসলাম। গোড়ালির ইনজুরির কারণে লম্বা দৈর্ঘ্যের ক্রিকেট খেলায় ঝুঁকি আছে বগুড়ার এই পেসারের। সেটি হলেও দলের দুর্দিনে 'এসওএস' গেছে শফিউলের কাছেই। বারবার সুযোগ পেয়েও সেটি কাজে লাগাতে না পারায় হুমকির মুখে ছিল শাহরিয়ার নাফীসের জায়গাও। কিন্তু বিকল্প হিসেবে আছেন যিনি, সেই ইমরুল কায়েসেরও তো চলছে ফর্মের সঙ্গে আড়ি। তার ওপর ভুগছেন ইনজুরিতেও। সব মিলিয়ে আরেকটি সুযোগ হয়তো পেতে পারেন শাহরিয়ার।
আশরাফুল হয়তো আর তা পেলেন না। ২০০৩ সালে মুলতানের ওই অবিস্মরণীয় ম্যাচে বাংলাদেশ দলের অংশ ছিলেন তিনি। এরপর যেমন নানা উত্থান-পতনে এগিয়েছে তাঁর ক্যারিয়ার। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অর্জন-বিসর্জনের গতিপথটিও তেমন। আর এখন দুই পক্ষই হারিয়ে খুঁজে ফিরছে নিজেদের।
বাংলাদেশ ক্রিকেট এবং আশরাফুল এখানে এক বিন্দুতে!
No comments:
Post a Comment