Thursday, December 22, 2011

All rounder Cricket News-আফসোসের পাশেই প্রাপ্তির সন্ধান

এটা হলে ওটা হয় না। আবার ওটা হলে এটা ঠিক থাকে না। দুটি মিলেই বাংলাদেশের নিজেদের প্রত্যাশার সমানুপাতেই যাওয়া হয় না বেশির ভাগ সময়।
কাজেই পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের শেষ টেস্টে আরেকটু ভালো করা যেত কি না, এ প্রশ্ন শুনে মুশফিকুর রহিমের প্রথম প্রতিক্রিয়াই হলো 'এ আর নতুন কী' ধরনের। দিনের পর দিন দেখে আসার অভিজ্ঞতাই তিনি তুলে ধরলেন, 'এমন নয় যে এটা আমার শুধু এ সিরিজেই মনে হচ্ছে। আমি বাংলাদেশ দলে খেলতে শুরু করার পর থেকে সব সময়ই মনে হয়েছে, এটা একটু এ রকম হলে, ওটা একটু ও রকম হলে ফলাফলটা অন্য রকম হতে পারত। এটাই সত্যি কথা।'

আর সত্যিটা এমনই নির্মম যে দিনের শেষে এ জন্য হাপিত্যাশ করেও মরতে হয়! বাংলাদেশ অধিনায়কও করেছেন, 'আমাদের কিছু কিছু বাজে পারফরম্যান্স এমন সময়ে হয়ে যায় যে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হয়।' তেমন কিছু পারফরম্যান্সের লম্বা এক তালিকাও কাল শোনা গেছে মুশফিকের মুখে। এর মধ্যে সবার আগে থাকছেন জেসন সুইফটের শিষ্যরা। এ অস্ট্রেলিয়ান ভদ্রলোক বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং কোচ। তিনি এসেছেন বেশ কিছুদিন, তবে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ দলের উন্নতিটা ঠিক তাঁর নামের সঙ্গে মানানসই হচ্ছে না। হচ্ছে যে না, সেটা তো মুশফিকের কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে, 'আমার মনে হয়, আমরা নিজেদের সবচেয়ে বেশি ডুবিয়েছি একটা ডিপার্টমেন্টে_সেটা ফিল্ডিং। বেশ কিছু ক্যাচ মিস হয়েছে। তাতে আমাদের বিপদ আরো বেড়েছে।'
সাকিব আল হাসানের ১৪৪ আর শাহরিয়ার নাফীসের প্রায় সেঞ্চুরিছোঁয়া ইনিংসে প্রথম ইনিংসে ৩৩৮ রানের আশাব্যঞ্জক সংগ্রহ দাঁড় করানোর পরই ফিল্ডাররা বিপদ বাড়িয়ে গেছেন ক্রমাগত। তাঁদের সুবাদেই পাকিস্তান ১৩২ রানের লিড নিতে পেরেছে বলে মনে করেন অধিনায়ক, 'সবগুলো না হোক, প্রথম ইনিংসে আমরা গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচগুলো নিতে পারলেও দেখা যেত ওরা হয়তো এত বড় লিড পেত না। ৫০ রান, বড় জোর ৬০ রানের লিড হয়তো পেত। তখন আমরা দ্বিতীয় ইনিংসে আড়াই শ করলেও খেলাটা অন্য রকম হতো।' ফিল্ডাররা ক্যাচ মিসের মহড়া দেওয়ার পরও এ টেস্ট থেকে ভালো ফল বের করার সুযোগ দেখেছিলেন। সেটা পঞ্চম দিনের প্রথম সেশনটা তিনি আর নাসির মিলে নির্বিঘ্নে পার করে দেওয়ার পর, 'আগের দিন যখন ৫ উইকেট পড়ে গেল, তখন মনে হচ্ছিল ড্র আর সম্ভব নয়। তবে আজ (গতকাল) আমি আর নাসির মিলে লাঞ্চ পর্যন্ত পার করে দেওয়ার পর মনে হচ্ছিল সম্ভব। আরেকটা সেশন পার করে দিতে পারলেই হতো। তখন ১৫০ বা ১৮০ রানের লিড হয়ে যেত। তখন ওদের জন্য কাজটা অবশ্যই কঠিন হয়ে যেত।'
কিন্তু ওই যে, বাংলাদেশের ভাবনার প্রতিফলন বেশির ভাগ সময়ই মাঠে ঘটে না। ঘটেনি এবারও। একটা সেশন ভালো গিয়েছিল ঠিক কিন্তু বিরতির পরেই ছন্দপতন। নাসির হোসেন আউট হওয়ার পর মুশফিকও তাঁকে খুব দ্রুতই অনুসরণ করলেন। যেভাবে আউট হয়েছেন, তাতে নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতেও আপত্তি করলেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'হ্যাঁ, আমার মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করছে। আমি আমার দলকে ডুবিয়ে এসেছি।' যদিও দাবি করছেন যে তাঁর পরিকল্পনায় কোনো গলদ ছিল না, 'নাসির আউট হওয়ার পর তিনজন টেলএন্ডারকে নিয়ে পুরো সেশন খেলা খুব কঠিন ছিল। তাই সেট ব্যাটসম্যান হিসেবে আমি চাইছিলাম, কিছু সুযোগ নিয়ে ২০ থেকে ৩০টা রান করে ফেলতে। করতে পারলে হয়তো ৩০ ওভারে ১০০-র জায়গায় ওদের টার্গেট থাকত ১৫০। তারপরও আমি নিজেতে দোষ দেব। আমি ওই সময় ওভাবে আউট না হলে অন্তত আরো আধা ঘণ্টা খেলতে পারতাম। সে ক্ষেত্রে ওরা ওভার অনেক কম পেত।'
অবশ্য একটা হলে আরেকটা না হওয়ার আফসোস নিয়ে টেস্ট করার পর নিজেদের প্রাপ্তিও কম দেখছেন না মুশফিক, 'দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট পড়ার পর আমার আর নাসিরের যে পার্টনারশিপটা হলো তাতে এ ইঙ্গিতটা আছে যে আমরা আগের চেয়ে অনেক বেশি শেখার চেষ্টা করছি।' সে চেষ্টার আরো কিছু ফলও তিনি দেখতে পেয়েছেন, 'সার্বিকভাবে যদি দেখেন তাহলে দেখবেন, প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংস থেকে এ টেস্টের প্রথম ইনিংস পর্যন্ত ধারাবাহিক উন্নতি করেছি আমরা। এটাও খেয়াল করে থাকবেন যে টেস্টে লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করার ব্যাপারটায়ও আমাদের কিছু ব্যাটসম্যান সফল হয়েছে।' সব মিলিয়ে আফসোস চেপে রেখে এমন এক উপসংহারেও পেঁৗছাতে পারছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'সব মিলিয়ে পাঁচটা দিন আমরা ভালো খেলেছি। আগে দেখা যেত, একটা দিন আমরা ভালো খেলতাম। আরেক দিন খারাপ খেলতাম। আমার মনে হয়, এটা একটা টেস্ট, যেখানে আমরা পাঁচটা দিনই কিছু না কিছু ভালো খেলেছি।'
একটা হলে আরেকটা যাঁদের ঠিকঠাক হয় না, তাঁদের তো এসবেই সান্ত্বনা খুঁজতে হয়!

No comments: